ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত ও পাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দুটি ধারায় ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালতে। এসকে সিনহাই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক প্রধান বিপারপতি, যিনি দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হলেন। গত চার বছর ধরে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।
ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) এই ঋণ আত্মসাতের মামলার ১১ আসামির মধ্যে আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত, খালাস পেয়েছেন দুজন।
সাত আসামি হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, ব্যাংকের সাবেক এমডি একেএম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
এর মধ্যে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে দুই দফা রায় ঘোষণার দিন পরিবর্তন হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ২১ অক্টোবর রায় প্রস্তুত না হওয়ায় এবং প্রথম দফায় গত ৫ অক্টোবর বিচারক অসুস্থ থাকায় রায় ঘোষণা হয়নি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ (দুদক) ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য প্রথম দফায় ৫ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়।
এ মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণের নামে চার কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এসকে সিনহার ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগে গত বছরের ১০ জুলাই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত শেষে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর দুদক পরিচালক মো. বেনজীর আহমেদ আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।
গত বছরের ১৩ আগস্ট মামলায় এসকে সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। গত ২৪ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ২১ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে নজিরবিহীন টানাপড়েনের মধ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এস কে সিনহা। আর কখনও কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ বাংলাদেশ দেখেনি।
পদত্যাগের চার বছর পূর্ণ হওয়ার ঠিক দুদিন আগে আত্মসাতের এ মামলায় তার সাজার রায় এল, যে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে এসেছেন।
এস কে সিনহা বিদেশে যাওয়ার দুই বছর পর এ মামলা দায়ের করেছিল দুদক। এরপর গতবছর ১৩ অগাস্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। এসকে সিনহাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।