সাধারণ মানুষকে যাতে ধর্মের নামে ধোকা দিতে না পারে এবং নিরীহ মানুষের অর্থ-সম্পদ যাতে হয়রানিমূলকভাবে মিথ্যা মামলা করে হাতিয়ে নিতে না পারে সে জন্য রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের মূল আস্তানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখা কার্যালয় বন্ধ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কথিত পীরের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন ‘উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত’ এবং তাদের প্রচারিত সংবাদপত্র ‘আল বাইয়্যিনাত ও আল ইহসান’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। গতকাল সোমবার আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার রিটকারি আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। লিখিত আদেশে বলা হয়, কথিত পীর ও তার দরবার শরীফের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার একর জমি ও রাবার বাগান রয়েছে। যা তারা অবৈধভাবে দখল করে রয়েছেন।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই সময় রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদ ও দায় বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি পীর ও তাঁর সহযোগীরা দেশের ছয় জেলায় পৃথক মামলা দিয়ে রিট আবেদনকারীদের হয়রানি করছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা তদন্ত করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত করে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় সিআইডিকে। সাত বছর বয়সী শিশু, দুজন নারী, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাদ্রাসার শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ আট ব্যক্তির করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই আদেশ দেন।
রাজারবাগ দরবারের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিমতের ভিত্তিতে পীর ও তাঁর অনুসারীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না, সে বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে তদন্ত করতে বলা হয়। সিটিটিসিকেও আদালতে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেন।
রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর ও তাঁর ১১ সহযোগী দেশের ৬টি জেলায় পৃথক ৩৪টি মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন অভিযোগ করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ওই ৮ ব্যক্তি গত ১৬ সেপ্টেম্বর রিট আবেদন করেন। এ ছাড়া রিট আবেদনকারীদের অযথা হয়রানি না করতেও নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে ৪৯ মামলার চক্করে পড়ে একরামুল আহসান নামের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই সব মামলা দায়ের ও এর পেছনে কারা আছেন, তা খুঁজে বের করতে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে একরামুলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় করা মামলার পেছনে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমান ও তাঁর অনুসারীদের সম্পৃক্ততার তথ্য এসেছে।
আট ব্যক্তির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ওই সময় সাংবাদিকদের জানান, দেশের ৬টি জেলায় ৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বাদীর নাম থাকলেও পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। একরামুলের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর অনেক বাদী ও সাক্ষীর সঙ্গে রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বাদী ও সাক্ষীর নামের মিল পাওয়া যায়। তাই রাজারবাগের পীর ও তাঁর ১১ সহযোগীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়।