প্রথম আলোর সহযোগি প্রকাশনা কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
৫০ কোটি করে মোট ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, বিবাদীদের কাছে সে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে নিহত ছাত্রের বাবা ও কলেজ কর্তৃপক্ষের রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল দেয়।
রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম আব্দুর রউফ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী রউফ বলেন, “প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে এর আগে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছিল। প্রথম আলো থেকে সে নোটিসের জবাব দিলেও সেখানে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেনি। পরে গত জুনে রিট মামলাটি করা হয়। আদালত রুল দিয়েছেন।”
আবরারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কেন ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, “ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে। নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় এ প্রতিষ্ঠানটির সুপ্রতিষ্ঠিত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, সুনাম নষ্ট হয়েছে। যে কারণে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।”
প্রথম আলোর প্রকাশক-সম্পাদক, কিশোর আলোর সম্পাদক, স্বরাষ্ট্র, তথ্য জ্বালানি, ও শিক্ষা সচিবসহ মোট ১২ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রায় দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ক্যাম্পাসে কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যানে নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার রাহাত।
ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক কিশোর আলো প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কিশোর আলোর প্রকাশক; আর কিশোর আলোর সম্পাদক হলেন আনিসুল হক।
রাহাতের মৃত্যুর পর তার বাবা মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলো সম্পাদকসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
দণ্ডবিধির ৩০৪ এ ধারার দায়ের করা এই মামলায় দোষ প্রমাণে আসামিদের সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।
তদন্ত শেষে গত বছর ১৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলিম।
তাতে নাইমুল আবরারের মৃত্যুর পেছনে কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের ‘অবহেলার প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, অনুষ্ঠানের জন্য যে বিদ্যুৎসংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল, তা ‘অরক্ষিত’ ছিল।
অভিযোগপত্রে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। তবে গত বছরের ১২ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের সময় আনিসুল হককে বাদ দেয়া হয়।
পরে প্রথম আলোর সম্পাদক-প্রকাশক মতিউর রহমান মামলা বাতিলের আবেদন করেন হাই কোর্টে।
সেই আবেদনে হাই কোর্ট মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তার বিরুদ্ধে মামলা কেন বাতিল করা হবে না, মেই রুলও দেয়া হয়। বিডি নিউজ।