দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল টাকার মালিক হওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেককে অস্ত্র আইনের মামলার দুটি ধারায় ১৫ বছর কনে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগরের ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক রবিউল আলম সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন।
দুটি ধারায় মালেককে ১৫ বছর করে মোট ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে বলে তাকে ১৫ বছরই কারাগারে কাটাতে হবে।
বিচারক তার রায় পড়া শেষ করেন মাত্র পাঁচ মিনিটে।
প্রতিক্রিয়া
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।”
অন্যদিকে মালেকের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এই রায়ের মধ্যে দিয়ে ন্যায় থেকে বঞ্চিত হয়েছি।… এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
বিচারক সাজা ঘোষণার পর মালেক বলতে থাকেন, “আমাকে মিথ্যাভাবে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে ধরা হয়েছে। আমি নির্দোষ, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। র্যাব যখন বাসায় এল, তখন কিছুই পায় নাই। পরে এসব অস্ত্র-গুলি কোথা থেকে এলো?”
“মালেকের স্ত্রী এজলাসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। মালেকের বোন চিৎকার করে বলতে থাকেন, “মিথ্যা মামলায় আমার ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে, আমি আমার ভাইকে না নিয়ে বাসায় যাব না।”
মালেকের ছেলে বলেন, “আমার বাবার নাকি এত টাকা, কোথায় গেলো এসব টাকা? একশ দুইশ কোটি টাকা নাকি আমার বাপের, কোথায় গেল?”
মালেকের স্বজনরা এজলাসের বাইরে এভাবে চিৎকার করে বিলাপ করতে থাকলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা এক পর্যায়ে তাদের মহানগর আদালতের দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামিয়ে নিয়ে যান।
মামলা বৃত্তান্তঃ
অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের কারবার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গতবছর ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গাড়িচালক মালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সে সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি টাকার জাল নোট উদ্ধারের কথা জানানো হয়।
সে ঘটনায় র্যাব-১ এর পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। এরপর মালেককে ১৪ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় গত ১১ জানুয়ারি মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব -১ এর এসআই মেহেদী হাসান চৌধুরী। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত গত ১১ মার্চ এ মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালক আব্দুল মালেক ওরফে বাদল ‘খুবই প্রভাবশালী’। তিনি বাংলাদেশ সরকারি গাড়িচালক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী সমিতির সভাপতি হিসেবে প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
কর্মস্থলে সাংগঠনিক পদবি কাজে লাগিয়ে তিনি ‘বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের’ মালিক হয়েছেন এবং তিনি ‘জাল টাকার কারবারও’ করতেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১৩ জন সাক্ষীর সবাই আদালতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দেন।
এরপর গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলার অবশিষ্ট অংশ বিচারের জন্য ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে ৯ সেপ্টেম্বরে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন আসামি মালেক।
১৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি জানিয়েছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।