ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১   সন্ধ্যা ৬:০২ 

সর্বশেষ সংবাদ

নাটোরের এমপি শিমুলের কানাডায় বাড়ি কেনার তথ্য চেয়েছে হাই কোর্ট

নাটোরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর দ্বৈত নাগরিকত্ব ও কানাডায় বাড়ি কেনার তথ্য জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে তা নাটোর সদরের বনবেল ঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রেজাউল চৌধুরীকে হলফনামা করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
অর্থ পাচারে জড়িত দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারী সংক্রান্ত হাই কোর্টের স্বঃপ্রণোদিত মামলায় পক্ষ হতে আবেদন করেছিলেন রেজাউল চৌধুরী।
রোববার তার আবেদনটি নিষ্পত্তি করে শিমুলের তথ্য নিয়ে আদেশ দেয় বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
আদালত আদেশে বলেছে, “আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হল। আবেদনকারীর কাছে এ সংক্রান্ত (সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর বিষয়ে) বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে তা হলফনামা করে আদালত, রষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন –দুদকে সরবরাহ করতে বলা হল।”
পাশাপাশি রষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতেও বলা হয়েছে আবেদনকারী রেজাউল চৌধুরীকে।
আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক ও মো. বেলাল হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
পক্ষভুক্তির আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতা ছিল জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, “আজকে একজন এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন পক্ষভুক্ত হতে, কাল আরেকজন আসবেন কোনো একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে না।”
তিনি বলেন, “১৩ হাজার ৯৩১ জন দ্বৈত নাগরিকের তালিকা আমরা আদালতে দাখিল করেছি। সেটির এখনও শুনানি হয়নি। আবেদনকারী বলছেন, এই তালিকা থেকে সংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নাম বাদ পড়েছে। যদি বাদ পড়ে থাকলে তা যুক্ত করে নিতে পারি আমরা। এর জন্য পক্ষভুক্ত হওয়ার কোনো দরকার নেই।”
এ আইন কর্মকর্তা বলেন, রেজাউল চৌধুরীর আবেদনটি আদালত নিষ্পতি করে আদেশ দিলেও তাকে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে বলা হয়নি।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান।
প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলে জানান তিনি।
এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেলেন। তবে সেদিন কারও নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
সে বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার ‘বেগম পাড়া’র প্রসঙ্গ উঠে আসে।
সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত বছর ২২ নভেম্বর হাই কোর্ট অর্থপাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চায়।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।
এছাড়া প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল দেয়।
নির্দেশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এসব প্রতিবেদনের উপর শুনানির পর বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে দেশে-বিদেশে নির্বিঘ্নে আসা-যাওয়া করছেন, তাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট।
ইমিগ্রেশন পুলিশ সুপারকে (ইমিগ্রেশন) সে তালিকা দিতে বলা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে সে তালিকা দাখিল করা হয় আদালতে; যেটি উপস্থাপনের অপেক্ষায় আছে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন নাটোরের রেজাউল চৌধুরী।
সংসদ সদস্য শিমুল ও তার স্ত্রী জান্নাতীর অর্থ পাচার ও কানাডায় বাড়ি কেনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে আবেদনটি করেন তিনি। সেই আবেদনটিই নিষ্পত্তি করে আদেশ দিল উচ্চ আদালত। বিডি নিউজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত