ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ম্যাজিস্ট্রেটদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার মৌখিকভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা সঠিক ও আইনগতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে আলাপ করতে বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন হাইকোর্টকে জানান, তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট দেখছি যে, খাসকামরায় বসে বা থানায় বসে ঘটনা ঘটার অনেক পরে সাজা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে মোবাইল কোর্ট সাজা দিতে পারে না। আইন অনুযায়ী তারা তো ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বিচার করবে।’
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় দুই শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাসের সাজা দেওয়ার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া ব্যাখ্যার একটি অনুলিপি আগামী ২৬ আগস্টের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে এই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতকে জানান, বুধবার রাতে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তিনি মুঠোফোনে কথা বলেছেন এবং জেলা প্রশাসন তাকে জানিয়েছেন যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই নাবালককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারিবারিকভাবে গত ১ আগস্ট নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নের একটি গ্রামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৫ বছর) সঙ্গে তার সমবয়সী একজনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এ খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিয়া সুলতানা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের আটক করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে একমাস করে সাজা দেন। এরপর তাদের গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ঘটনা নিয়ে গত ৪ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে দুই শিশুকে দণ্ড’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ইমেইলে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিচার করতে পারবেন না।
এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম শিশু দুটিকে তাৎক্ষনিক মুক্তির নির্দেশ দেন। সূত্র -দ্য ডেইলি স্টার।