তালাক নোটিসে নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর, অমানবিক ও অযৌক্তিক’ শব্দের ব্যবহার কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান “প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে পাঠানো তালাক নোটিসে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার একজন নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর; যা পারিবারিক জীবনে এবং পরবর্তীতে বিয়ে করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে ফেলে।
“রিট আবেদনকারীই এ ধরনের অসম্মানজনক, বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছেন। যে কারণে তিনি রিট আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছে।”
২০১১ সালে পরিচয়ের পর ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বরে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কানাডার উইনজা ইউনিভার্সিটির অডেট স্কুল অব বিসনেসে কর্মরত রিট আবেদনকারীর। দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে আবেদনকারীকে তালাক নোটিস পাঠান তার স্বামী।
সে নোটিসে তালাক দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় “স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য– যাহা শরিয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাহার উক্ত চাল-চলন পরিবর্তন করার জন্য আমি নিজেই বহুবার চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু অদ্যবধি তাহার কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় নাই।”
তালাকের পর আবেদনকারী নারী ফের বিয়ে করতে গেলে তালাক নোটিসে ব্যবহৃত শব্দের কারণে তাকে বিব্রত ও অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে তালাক নোটিসে ব্যবহৃত ‘স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য’, ‘শরিয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থি’ এ ধরনের শব্দকে ‘অবমাননাকর, অমানবিক, অযৌক্তিক’ হিসেবে বর্ণনা করে গত ২ জুন হাই কোর্টে এই রিট করেন সেই নারী।
রুলের পাশাপাশি তালাক নোটিস থেকে নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর, অমানবিক এবং অযৌক্তিক’ শব্দের অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
তাতে বলা হয়, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন এবং ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিয়ে এবং তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী তালাক নোটিসে ‘অবমাননাকর, অমানবিক, অযৌক্তিক’ শব্দের ব্যবহার স্পষ্টভাবে নারীর ‘মানবাধিকার ও তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে’, যা একই সঙ্গে সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ৩২ অনুচ্ছেদেরও ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’।
“নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে পাঠানো এ ধরনের তালাক নোটিস কেবল অইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূতই না আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং ১৯৮১ সালের সিডও সনদ অনুযায়ী তা মৌলিক ও মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন।
“আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সিডও সনদে সাক্ষর করে সরকার নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য বিলোপের নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে সংবিধান, আইন, চুক্তি ও সনদের শর্ত রক্ষায় সর্বোপরি নারীর মানবিক মৌলিক অধিকার তালাকের নোটিসে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার বন্ধ করা সরকারের আইনগত দায়িত্ব।” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।