স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার আসামি পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে তদন্ত কর্মকর্তার সামনে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান এই আদেশ দেন। কারাগারে আটক বাবুলের বাবা ও ভাইকে ১৫ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমার মিতুর দুই সন্তানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী’ উল্লেখ করে আদালতে করা আবেদনে বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। কিন্তু বারবার উদ্যোগ নিয়েও তা সম্ভব হয়নি।
বাবুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তার ১২ বছরের ছেলে এবং আট বছরের মেয়েটি তার পরিবারের কাছে রয়েছে।
মাতৃহীনা শিশু দুটিকে নিজেদের কাছে নিতে গত মাসে ঢাকার আদালতে আবেদন করেন মিতুর বাবা ও হত্যা মামলার বাদী মোশাররফ হোসেন। তবে তিনিও এখনও পর্যন্ত নাতি-নাতনীর দেখা পান নি।
পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, “মাহমুদা আক্তার মিতুর বড় ছেলে হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ছোট মেয়ে পরিবারের সদস্য হিসেবে এ মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। সঙ্গত কারণে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। “চেষ্টা করেও তাদের হাজির করতে না পেরে আমরা আদালতের কাছে আবেদন করেছি। আদালত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাক্ষীদের হাজির করতে তাদের দাদা ও চাচাকে নির্দেশ দিয়েছেন।”
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল। পরে নানা গুঞ্জনের মধ্যে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয় তাকে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর পিবিআই স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে বাবুলের জড়িত থাকার কথা জানালে ১২ মে নতুন মামলা করেন মিতুর বাবা। ওই মামলায় এখন বাবুল কারাগারে আছেন।
আদালতে করা পিবিআই’র আবেদনে বলা হয়, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির করতে বাবুল আক্তারের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া এবং চাচা হাবিবুর রহমান লাবুকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও তারা সাড়া দিচ্ছেন না।
নাতি-নাতনীদের ‘খোঁজ না পেয়ে’ মিতুর বাবার আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, “এতে প্রতীয়মান যে, সাক্ষীদের দাদা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও চাচা হাবিবুর রহমান লাবু সাক্ষীরা যাতে তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিতে না পারে সেজন্য অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন।”
এদিকে বাবুল আক্তারের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, “আদালতে তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমরা মামলার পক্ষভুক্ত। আদালত কোনো আদেশ দিয়ে থাকলে সে বিষয়ে জেনে পদক্ষেপ নেব।”
তিনি বলেন, “এর আগেও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বাবুল আক্তারের সন্তানদের বিষয়ে জানতে চেয়ে একটি আবেদন করা হয়েছিল। ওই বিষয়ে ৩১ মে উপস্থিতির দিন ধার্য থাকলেও আমরা জানতে পেরেছিলাম পরের দিন। সেখানে আমরা আইনগতভাবে অগ্রসর হয়েছি। এখানেও হব।”
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন জানান, “নাতি-নাতনীর কোনো খোঁজ আজ পর্যন্ত আমরা পাইনি। তাই গত মাসে ঢাকার আদালতে আবেদন করেছিলাম। সেখানে ৩১ মে এবং ৮ জুন ধার্য দিন থাকলেও আমার নাতি-নাতনীদের হাজির করা হয়নি। আগামী ১৫ জুন পরবর্তী দিন আছে।”
“আমরা নাতি-নাতনীদের কাছে রাখতে চাই,” বলেন তিনি।
মিতুর বাবা মোশাররফ যেমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক, তেমনি বাবুলের বাবা ওয়াদুদও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক। বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম।