ঢাকা   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ৩:২৩ 

সর্বশেষ সংবাদ

মানবপাচারের অপরাধে কুয়েতে দণ্ডিত সাবেক এমপি পাপুলের পক্ষে হাইকোর্টে রিট, মঙ্গলবার আদেশ

কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত লক্ষীপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারি ও উপনির্বাচনের তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য্য করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। পরে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট সাংসদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসন শূন্য ঘোষণা করা যায় না। সংসদের কার্যবিধি অনুসারে সংশ্লিষ্ট আদালত হতে দণ্ড সম্পর্কে অবহিত হয়ে স্পিকার আসন শূন্য ঘোষণার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
তবে শহিদ ইসলাম পাপুলের ক্ষেত্রে কুয়েতের আদালত থেকে এমন কোনো চিঠি বা তথ্য স্পিকারের কাছে আসেনি বলে রিট আবেদনকারীরা জানিয়েছেন। তাই আসনটি শূন্য ঘোষণা এবং উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আইনসম্মত হয়নি। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।
রিটে ওই আসন শূন্য ঘোষণার প্রজ্ঞাপন এবং আসনটিতে উপনির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল অবৈধ ঘোষণার আরজি জানানো হয়েছে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সংসদ বিষয়ক সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও নির্বাচন কমিশনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। অপরদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, আসন শূন্য ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
এর আগে গত মার্চ মাসে এই আসন শূন্য ঘোষণা ও উপনির্বাচন তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শহিদ ইসলামের বোন নুরুন্নাহার বেগম এবং ওই আসনের বাসিন্দা শহিদ ইসলামের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবকারী শাহাদাত হোসেন ওই রিট করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সংসদ বিষয়ক সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও নির্বাচন কমিশনকে রিটে বিবাদী করা হয়।
গত ২২শে ফেব্রুয়ারি শহিদ ইসলাম পাপুলর আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন ওই আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ৪ঠা মার্চ। ঘোষিত তফসিল অনুসারে ১১ই এপ্রিল ওই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে আগামী ২১শে জুন নির্ধারণ করা হয়। গেজেটে বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে ৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন শহিদ ইসলাম। এ কারণে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সাংসদ থাকার যোগ্য নন তিনি। সে কারণে সংবিধানের ৬৭(১)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ (গত ২৮ জানুয়ারি) থেকে তার আসন শূন্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘুষ লেনদেনের মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ শহিদ ইসলামকে গত ২৮শে জানুয়ারি সাজা দেন কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। বিচারক রায়ে এই সাংসদকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাংসদের বিদেশের মাটিতে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। গত বছরের ৬ই জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় শহিদকে। আটকের সাড়ে ৭ মাস আর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে ৩ মাসের মাথায় দণ্ডিত হন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত