ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের ভবন ভাঙার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো: খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা দেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আলম চৌধুরী এ রিট দায়ের করেন।
সংস্কৃতি সচিব, প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ও কোতোয়ালি থানার ওসিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জ এলাকার শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ৪ জানুয়ারি দুপুরে ভবন ভাঙাকালীন দুই পক্ষকে মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন জনের হস্তক্ষেপে ভবন ভাঙা স্থগিত রাখা হয়। যদিও এর আগেই স্কুলের বেঞ্চ-টেবিলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বের করে ভবনের উপরের একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি- ভবনটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি। যা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এই আইনজীবীর ছেলে হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। ব্যারিস্টার যতীন্দ্রমোহনও ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। তিনি কলকাতার মেয়রও হয়েছিলেন। ইংরেজ স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তাকে নিয়ে কিছু দিন ভবনটিতে ছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে এসেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীরাও এই বাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা লড়েছিলেন যতীন্দ্রমোহন। এতে ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে ১৯৩৩ সালে কারাগারে মৃত্যু হয়েছিল যতীন্দ্রমোহনের। এরপর নেলী সেনগুপ্তা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জের বাড়িটিতে ছিলেন। ১৯ গণ্ডা এক কড়া পরিমাণ জমিটি পরে শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি বাড়িটি লিজ বা ইজারা নিয়ে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে। পরে নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইছহাকের সন্তানরা স্কুলটি পরিচালনা করছেন।