সংবিধান স্বীকৃত সমতা, আইন, অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে নারী ও ১৩ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ অনুমোদন দেওয়ার আইনি বিধান বাতিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত চারটি মানবাধিকার সংস্থার করা একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল জারি করে।
আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বারাষ্ট্র সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাক, নারীপক্ষ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন গত রোববার এ রিট আবেদনটি করে।
রিটে দণ্ডবিধির ৩৭৫, ৩৭৬ ধারা ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, জেনিফা জব্বার ও শারমিন আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
শারমিন আক্তার বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৭ শতাংশ নারী বিবাহিত জীবনে ধর্ষণের শিকার হন।
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী, বিবাহিত একটি মেয়ের বয়স যদি ১৩ বছরের নিচে না হয় এবং তার স্বামী যদি জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম করে তাহলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না।
দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী, যদি বিবাহিত নারী বা মেয়ের বয়স ১২ বছরের নিচে না হয় তাহলে ধর্ষণের শাস্তি হবে না। আবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার ব্যাখ্যায় বৈবাহিক ধর্ষণকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
শারমিন বলেন, “বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত এই ব্যতিক্রমগুলো আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ৩১ অনুচ্ছেদেরে সম্পূর্ণ পরিপন্থি। কারণ এই ধারাগুলোতে বিবাহিত নারী এবং অবিবাহিত নারীর মধ্যে বৈষম্য করা হয়েছে। স্বামী কর্তৃক ধর্ষণের বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে। তাই এই ধারাগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। কোর্ট এই মর্মেই রূল জারি করেছেন।”
টাঙ্গাইলের এক বিবাহিত কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় এ রিট আবেদন করা হয়।
গত ২৫ অক্টোবর টাঙ্গাইলে ১৪ বছরের ওই কিশোরী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসিএইচ) ভর্তি হওয়ার পরে যৌনাঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত ৩৪ থেকে ৩৫ বৎসর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিয়ে হয়েছিল মেয়েটির।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ওই কিশোরীর যৌনাঙ্গে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।