ঢাকা   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৬:২৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

নারী পাচার: রিমান্ড শেষে কারাগারে নৃত্যশিল্পী ইভান , পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

বিদেশে নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সাত দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার ইভানকে আদালতে তোলা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম দেবদাস অধিকারী তাকে করাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বাংলাদেশি নারীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার এবং জোর করে আটকে রেখে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গত ২ জুলাই মানবপাচার চক্রের হোতা আজম খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃনাল কান্তি শাহ।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড (২৬), স্বপন হোসেন (২৮), নাজিম (৩৬), এরশাদ ও নির্মল দাস (এজেন্ট), আলমগীর, আমান (এজেন্ট) ও শুভ (এজেন্ট)।

এদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের জবানবন্দিতে নাম আসায় গত ১১ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনের বাসা থেকে ইভান শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয় । পরদিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ইভানের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। মানবপাচারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক দালাল চক্রের কে বা কারা জড়িত তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদের দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা শুনানি শেষে তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

২০১৭ সালে ‘ধ্যাততেরিকি’ চলচ্চিত্রের নৃত্য পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। তিনি ‘সোহাগ ড্যান্স গ্রুপ’ নামে একটি নাচের দল পরিচালনা করেন। ‘এক্সপ্রোজার বিডি’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও আছেন তিনি।
তার রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা লিখেছিলেন, “ইভানসহ এই মামলার আসামিরা ভুক্তভোগীদের নাচ শিখিয়ে ভালো বেতনে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবে ভুক্তভোগীরা রাজি হলে তাদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিতসহ ক্লাবে নাচ-গান করার বিনিময়ে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে বলে মৌখিক চুক্তি করেন।

“ভুক্তভোগীরা সরল বিশ্বাসে আসামিদের ওপর ভরসা করে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে যেতে রাজি হন। আসামি আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের সহায়তায় এমন এক ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাজগপত্র প্রস্তুত করে দেন। তারপর ২০১৯ সালের মে মাসে তাকে দুবাইয়ের শারজায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে আজম খান সেখানে তাকে নিজেসহ বিভিন্ন লোক নিয়ে যৌন নির্যাতন চালান। কিন্তু দুবাই গমনের পর আসামিরা তাকে কোনো বেতন দেননি।

“আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিবাদী নির্মল দাস, আলমগীর, আমান ও শুভসহ অজ্ঞাতনামা এজেন্টের সহায়তায় ভুক্তভোগী অপর দুই নারীকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ড্যান্স ক্লাব থেকে প্রলোভনের মাধ্যমে নির্বাচন করেন। এভাবে বহু বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে আসামিরা দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার করেন এবং জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন চালান।

“আসামি নির্মল চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করা হলে গত ১৩ অগাস্ট আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি বলেন, ইভান বিদেশে পারফর্ম করার জন্য অধরা ও বিথী নামে দুজন আর্টিস্ট দেন। আসামি ইয়াছিনও ২০ অগাস্ট আদালতে স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা বলেন।”
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, “আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি তরুণীদের দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করছেন। তাদের বিরুদ্ধে তিনজন ভুক্তভোগী ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিরা আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও আসামিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক দালাল চক্রের কে বা কারা জড়িত তা বের করার জন্য ইভানকে সাতদিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।”
ইভানের পক্ষে আগের আইনজীবী খান মাহমুদুল হাসানের জায়গায় সোমবার নতুন আইনজীবী সুমন কুমার রায় জামিন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই স্বপন কুমার মণ্ডল ছিলেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে ইভানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত