বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা নাশকতার চার মামলার কার্যক্রম স্থগিতই রেখেছে আপিল বিভাগ।
এ চার মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ বাতিল প্রশ্নে হাই কোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদেন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বদরুদ্দোজা বাদল।
আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “২০১৪ সালের সহিংসতার ঘটনায় ২০১৫ সালে দারুসসালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় যখন এই মামলাগুলো হয়। তখন এফআইআরে তার নাম ছিল না। কারণ ঘটনার সময় তিনি গুলশানের কার্যালয়ে অন্তরীণ ছিলেন।
“কিন্তু অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় বেগম খালেদা জিয়ার নাম নাম যুক্ত করা হয়। ফলে আইন অনুযায়ী এই মামলাগুলো চলে না।”
২০১৭ সালে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। হাই কোর্ট তখন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে মামলা বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করে।
এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যে আবেদন করেছিল, সোমবার তার নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
এই চার মামলাসহ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ১১ মামলার শুনানির জন্য ৬ অক্টোবর তারিখ রয়েছে ঢাকার জজ আদালতে।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ সোমবার এই তারিখ ঠিক করে দেন বলে এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস পাল জানান।
এই ১১ মামলার মধ্যে দারুস সালাম থানার নাশকতার আট মামলা, যাত্রাবাড়ী থানার দুটি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা রয়েছে। হাই কোর্টের আদেশে সবগুলো মামলার কার্যক্রমই স্থগিত রয়েছে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
এসব মামলার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলা অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি দশটি মামলা রয়েছে অভিযোগ গঠনের শুননির অপেক্ষায়।
করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সে কারণে নিয়ম অনুযায়ী অন্য সব মামলার মত খালেদার মামলাগুলোর শুননির জন্যও তারিখ রেখেছে জজ আদালত।
নির্ধারিত দিনে এসব মামলার নথি আদালতে তোলা হবে। তখন স্থগিতাদেশের বিষয়টি জানানো হলে আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে সে পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখবে।
২০১৫ সালে বিএনপিসহ ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাসে আগুন, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি ও দারুস সালাম থানায় আটটি মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দায়ের করা হয় ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। সাজা স্থগিতাদেশের সেই মেয়াদ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে তিন ডজন মামলা রয়েছে, যার বেশিরভাগ এক যুগ আগে জরুরি অবস্থার সময় দায়ের করা।