বঙ্গবন্ধু হত্যাকারিদের অন্যতম আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের আগে তাকে কয়েকটি বিষয়ে জিজ্ঞসাবাদ করা দরকার বলে আমরা মনে করি।
১. কাদের নির্দেশনায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও পরবর্তীতে কারাগারে জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। (দুই মামলার বিচারে এ প্রশ্নের মীমাংসা হয় নি। নেপথ্যের ক্রীড়নক কারা ছিল তা বের হয়নি) ।
২.বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান খুনিদের বিদেশ পাঠিয়েছিলেন, দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন। মাজেদকে পরবর্তীতে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক, অর্থমন্ত্রণালয়ের উপসচিব করা হয়েছিল। তাকে সেনানিবাস এলাকায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল (অবশ্য ফারুক, রশিদসহ অন্য খুনিদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছিল)। জিয়ার পর এরশাদ, এমন কি ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত খুনিদের পুরস্কার দেয়া অব্যাহত ছিল। খুনিদের এভাবে পুরস্কৃত করা, পুনর্বাসন করার নেপথ্যে কি ছিল তা মাজেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা হোক।
৩. দীর্ঘ ২৫ বছর সে কোথায় পালিয়েছিল, দেশে সে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো,অন্য পলাতক খুনিরা কোথায় আছে সেগুলোও জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা দরকার।
আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এই খুনিরা ইতিহাসের অংশ। আলোকিত দিক যেমন ইতিহাসের অংশ অন্ধকারটাও ইতিহাসেরই অংশ। অন্ধকারটাও আমাদের জানতে হবে। নিশ্চিত মৃত্যুর আগ মুহূর্তে খুনি হয়তো ইতিহাসের অনেক অপ্রকাশিত তথ্য দিয়ে যেতে পারে। একটা জাতির জন্য,বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের জন্য এসব তথ্য জানা দরকার।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যা মামলার বিচারের ইতিহাসে প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমরা কয়েকজন সাংবাদিকও। দিনের পর দিন আদালতে থেকে আমরা বিচারের খবর সংগ্রহ করেছি। গ্রেপ্তারকৃত খুনিদের কাছ থেকে দেখেছি। ফারুক রশিদের ঔদ্ধত্যও দেখেছি। বিচারের সর্বশেষ ধাপ পর্যন্ত দেখে মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে সরাসরি যারা খুন করেছে এমন কয়েকজন খুনির বিচার হয়েছে, প্রাণদণ্ড হয়েছে মাত্র। কিন্তু একটা জাতির ইতিহাস পাল্টে দিতে, বাঙালী জাতিসত্বাকে নিঃশেষ করে দিতে কয়েকজন নিম্নমাঝারিস্তরের সেনাকর্মকর্তা খুনি হয়েছে তা বিশ্বাস হয় না। এর সঙ্গে জড়িত ছিলে দেশী ও আন্তর্জাতিক শক্তি। নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারিরা চিহ্নিত হয় নি বিচারে। তাই দাবি ছিল ষড়যন্ত্রকারিদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন করার। সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে হতে পারে এ কমিশন। এই কমিশনের মাধ্যমে চিহ্নিত হতে পারে ষড়যন্ত্রকারিরা। খুনি মাজেদকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।