ঢাকা   শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১   সন্ধ্যা ৬:৫২ 

সর্বশেষ সংবাদ

তৃণমূল বিএনপির হাল ধরলেন নাজমুল হুদার মেয়ে, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা

আড়াই মাস আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া ‘তৃণমূল বিএনপি‘র হাল ধরে প্রয়াত নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা বলেছেন, তারা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছেন।
শনিবার ঢাকার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি; যেখানে তাকে দলের নতুন নেতা বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
‘শাইনপুকুর’ স্যুটসের সিগনেচার হলে এই সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হুদার স্ত্রী তৃণমূল বিএনপির উপদেষ্টা সিগমা হুদা ছিলেন।
তিনি জানান, আগামী বছর দলের কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন তার মেয়ে অন্তরা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য নাজমুল হুদা ২০১৫ সালে তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে দলটি ইসির নিবন্ধন পায়।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নাজমুল হুদা মারা যাওয়ার পর তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান পদটি ফাঁকা ছিল। ৭৬ দিন পর নতুন নেতার নাম ঘোষণা হল।
সিগমা হুদা বলেন, “ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার চিন্তা-চেতনা এবং আদর্শ ধারণ ও বহন করেন এমন ব্যক্তিত্বকে দলীয় নেতৃত্বে আনার লক্ষ্যে গতকাল তৃণমূল বিএনপির সাধারণ সভায় দলের মরহুম চেয়ারম্যানের বড় কন্যা অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করা হয়েছে।
“আমরা প্রত্যাশা করছি, তার নেতৃত্বে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে তৃণমূল বিএনপিকে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমান কমিটি অ্যাডহক ভিত্তিতে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম কাউন্সিল সভা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলন মায়ের পাশের চেয়ারে বসা ছিলেন অন্তরা হুদা। পরে তাকে নেতারা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান উপস্থিত দলের নেতারা।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব শেখ হাবিবুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আক্কাস আলী খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে অন্তরা হুদা বক্তব্যে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বক্তব্য শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে।
নির্বাচনে ‘৩০০ আসনে প্রার্থী’
সংবাদ সম্মেলনে সিগমা হুদা বলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কার্য্ক্রম আরও গতিশীল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারাদেশে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও পার্টি ফান্ড ও নির্বাচনী ফান্ড সংগ্রহ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনকে সমানে রেখে দেশের ৩০০টি আসনে দলের প্রার্থীর তালিকা তৈরি করা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে অন্তুরা হুদা বলেন, “যদি পরিবেশ হয়, নির্বাচনে অবশ্যই আমরা যাব।”
সেই নির্বাচন কি জোটবদ্ধ হয়ে, না এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে। আমরা সবেমাত্র শুরু করলাম যাত্রা।”
তবে পাশ থেকে সিগমা হুদা বলেন, “আমরা কারও পক্ষে নয়, বিপক্ষে নয়। আমরা যেটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে, মঙ্গল হবে, সেইভাবে আমরা যাব।”

অন্তরা বলেন, “আমার বাবার স্বপ্ন ও অসমাপ্ত কাজগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমি এই দায়িত্ব পালনে সম্মত হই। আজকে আমি দলের সকল সদস্য ও দেশের জনগণকে নিয়ে যেন দেশের জন্য ও দেশের জনগণের জন্য এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারি, এজন্য আমি আপনাদের (গণমাধ্যম) কাছে এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা ও দোয়া চাই।”
তৃণমূল বিএনপি যেভাবে এল
১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে দলটির প্রথম স্থায়ী কমিটিতে সদস্য ছিলেন নাজমুল হুদা। জিয়ার মৃত্যুর পর স্থায়ী কমিটি পূনর্গঠিত হলে তিনি বাদ পড়েন।
খালেদা জিয়ার সময়ে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় তিনি তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। মাঝে একবার বহিষ্কৃত হলেও পরে দলে ফেরানো হয় তাকে।
ওয়ান-ইলেভেনে পট পরিবর্তনের পর দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে যেতে হয় নাজমুল হুদাকে। জামিন মুক্ত হয়ে ২০১০ সালে দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য রাখলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল বিএনপির সদস্যপদ ফিরে পান তিনি।
এরপরে ২০১২ সালের ৬ জুন হুদা নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দেন।
ওই বছরই নাজমুল হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ গঠন করেন। পরে সেখান থেকেও বহিস্কৃত হয়ে ২০১৪ সালের ৭ মে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-বিএনএ’ এবং ওই বছরের ২১ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি-বিএমপি’ গঠন করেন।
এরপর তিনি ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’। নতুন এই দলটির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে আবেদন করেন তিনি।
নিবন্ধন না পেয়ে তিনি আদালতে যান। ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিতে রায় দেয়।
এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
তৃণমূল বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক- ‘সোনালী আঁশ’ এবং দলীয় স্লোগান হচ্ছে- ‘সুস্থ রাজনীতি, সুশাসনের ভিত্তি’। সূত্র-বিডি নিউজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত