ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ১:০৫ 

সর্বশেষ সংবাদ

প্রতিটি বিভাগে বিকেএসপি করার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের প্রত্যেক সদস্যকে পাঁচ লাখ ও কোচিং স্টাফদের দুই লাখ টাকা করে আর্থিক পুরস্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে শিরোপাজয়ীদের সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার তুলে দেন।
এ সময় লেখাপড়ার পাশাপাশি সন্তানদের খেলাধুলায় আগ্রহ করে তুলতে অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রতিটি বিভাগে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) করার ঘোষণাও দেন তিনি। ক্রীড়াক্ষেত্রে ভালো ফলাফলের জন্য প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে এদিকে যেমন জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অন্য দিকে খেলাধুলায় যাতে আরও উন্নতি হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিই। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফি পায়। ‘৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপের সফল আয়োজন আমরা করেছিলাম। আইসিসিতে যখন আমাদের ক্রিকেট দল জিতে আসে তখন বিরাট সংবর্ধনাও দিয়েছিলাম যাতে মানুষ উৎসাহিত হয়।
দুর্ভাগ্য যে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ক্রীড়াঙ্গনে আবার একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় চলে আসে। বিকেএসপিকে উন্নত করা, খেলার মানের উৎকর্ষতা সাধন, বিশেষ করে মেয়েদের ফুটবল খেলা; প্রমীলা ফুটবল টিম গঠন করে এই প্রতিযোগিতা আমরা শুরু করি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের একটি অঞ্চলে এই খেলা তখন হতে দেয়নি—মেয়েরা আবার খেলবে কেন? এ রকম প্রচণ্ড বাধা আসে। আমরা বাধ্য হয়েছিলাম রাজশাহীতে বন্ধ করে দিতে। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ২০০৯-এ সরকারে আসার পরে আমি শুরু করি প্রাইমারি থেকে প্রতিযোগিতা। স্কুলে স্কুলে যদি প্রতিযোগিতা হয় তাহলে এর মধ্য দিয়ে ভালো খেলয়াড় তৈরি হয় এবং আস্তে আস্তে তারা জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসে। আজকে সেটাই হচ্ছে। এখানে না বলে পারি না, আমাদের ছেলেরা যা পারে না মেয়েরা তার থেকে বেশি পারে। শুনলে আবার ছেলেরা রাগ করবে, রাগ করার কিছু নেই-ছেলেদের প্রতিযোগিতা একটু বেশি। তাও আমি বলবো, আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট ভালো করছে—বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় নারীদের ক্রিকেট ও ফুটবল উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই ১৪ বছরে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধন হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড যারা, অটিস্টিক, প্রতিবন্ধী, তাদেরকেও উৎসাহিত করছি আমরা। কারণ সবার জন্য ক্রীড়া এই নীতিতে বিশ্বাস করি আমরা। তারা পিছিয়ে থাকবে কেন?
তাদের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলও কিন্তু ভালো করছে। প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৮টি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সব কটায় তারা চ্যাম্পিয়ন। প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে যে প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গা আছে সেখানে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। আসলে ওটা সমাজ কল্যাণেরই জায়গা ছিল। এক সময় সেখানে মুক ও বধির স্কুল ছিল। তাছাড়া আমরা তাদের জন্য একটা অ্যাকাডেমিও করে দিচ্ছি।
শিশুদের খেলার প্রতি মনোযোগ দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকার বাচ্চারা ফ্ল্যাটে থেকে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলায় যায়-ই না। এটা হলো বাস্তব কথা। এখন তো ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সারাক্ষণ হয় মোবাইল ফোন না হয় ট্যাব নিয়ে বসে থাকে। কাজেই ফিজিক্যাল চর্চা হচ্ছে না। কিন্তু এটা খুবই দরকার। প্রত্যেকটা অভিভাবকদের আমি অনুরোধ করবো, অন্তত কিছুক্ষণ হলেও আপনারা আপনাদের বাচ্চাদের খেলাধুলার দিকে নজর দিন। তাদের খেলতে নিয়ে যান।
প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী-শিল্পকারখানার মালিকদের আমি আহ্বান করি, প্রত্যেকে যেন আমাদের খেলোয়াড়দের চাকরি দেয়, কাজ দেয়। হিজড়া-প্রতিবন্ধীদের যদি তারা চাকরি দেয় তাহলে কর মওকুফ করা হয়। সেইসঙ্গে আমি বলবো, তাদের উচিত খেলোয়াড়দেরও কাজ দিয়ে উৎসাহিত করা। প্রত্যেকে নিজস্ব টুর্নামেন্টও করতে পারে। নিজেদের টিম তৈরি করতে পারে। আগে তো তাই করতো, শুধু সরকার থেকে করবে কেন! যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে ততবেশি আমাদের খেলাধুলায় উৎকর্ষতা বাড়বে। আর যারা খেলাধুলা শেষ করে ব্যবসা করে বেশ টাকা-পয়সার মালিক হচ্ছে তাদের তো উচিত এদিকটা আরও বেশি করে দেখা, বলেন শেখ হাসিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত