ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১   ভোর ৫:৪১ 

সর্বশেষ সংবাদ

চাকরির নামে ভারতে পাঠিয়ে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন, ৩ জন গ্রেফতার

অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে চাকরি দেয়ার নামে ভারতে পাচার এবং ‘নির্যাতন কেন্দ্রে’ আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।
এরা হলেন- মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২), মো. বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)। সোমবার রাতে মিরপুর ও উত্তরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, এই চক্রটি কয়েক বছর ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, নকল ভিসা, আবেদনপত্র ও মানবপাচার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে র‍্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল বলেন, সেলিম এই চক্রের ‘হোতা’, তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মল্লিক ও নিরঞ্জন। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও সাতজন তাদের সঙ্গে জড়িত।
ভারতেও তাদের কিছু সহযোগী সদস্য রয়েছে জানিয়ে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, “তারা বিদেশে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের টার্গেট করে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। পরে তাদের পাশের দেশে পাচার করে দেয়। ওই সব দেশে ভারত থেকে ভিসা পাওয়া ‘সহজ’- এমন বুঝিয়ে তাদের  প্রতারিত করে।”
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “চক্রটি তাদেরকে ভারতে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে, মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে সেই ভিডিও পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে অর্থ ও মুক্তিপণ আদায় করে।”

অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে চাকরি দেয়ার নামে ওই চক্র জনপ্রতি ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয় জানিয়ে মোজাম্মেল বলেন, “ভারতে পাঠানোর পর দিল্লি ও কলকাতায় টর্চার সেলে আটকে মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করত তারা।”

সম্প্রতি জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি ভারতের ‘নির্যাতন কেন্দ্র’ থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, চাকরির জন্য বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সেলিম ও বুলবুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

তারা জাহাঙ্গীরকে অস্ট্রেলিয়া এবং জাহাঙ্গীরের ভাগ্নে আকাশকে নেদারল্যান্ডসে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে পাঠানোর জন্য ৩৪ লাখ টাকা দাবি করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, গত বছরের ১০ অক্টোবর সেলিমকে ৮ লাখ টাকা এবং এর কিছুদিন পর আরও ৬ লাখ দেন জাহাঙ্গীর। পরে ‘নকল ভিসায়’ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে জাহাঙ্গীর ও তার ভাগ্নে আকাশকে ভারতে পাঠায় ওই চক্র।

“সেখানে পাচারের পর থেকে তারা দুজন এই চক্রের আরেক সদস্য নিরঞ্জন এবং অন্যান্য সহযোগীদের হাতে আটক ছিলেন। সে সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও মৃত্যুভয় দেখিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে আরও ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাহাঙ্গীর কৌশলে পালিয়ে অনেক কষ্ট করে দেশে ফিরে আসে আর আকাশ এখনও ভারতে পাচারকারীদের হাতে আটক।

র‍্যাব জানায়, এ চক্রের সদস্য নিরঞ্জন পাল ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল ও মালটা পাঠানোর নামে নবাবগঞ্জের বিল্লাল হোসেন, রবিন হোসেন ও শাহীন খান নামে তিনজনকে ভারতে পাচার করেছে।

“তারা সেখানে অবর্ননীয় কষ্ট ভোগ করে মুক্তিপণ দিয়ে ছয় মাস পর দেশে ফেরত এসেছে। তারাও মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত