ঢাকা   শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১   রাত ৯:৩৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

সিগারেটের দাম ও করকাঠামোর আন্তর্জাতিক সেরা মানদণ্ডের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশসহ ১৭০টিরও বেশি দেশের সিগারেট করনীতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে প্রথমবারের মত ইন্টারন্যাশনাল সিগারেট ট্যাক্স স্কোরকার্ড প্রকাশ করেছে টোব্যাকোনমিকস। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস শিকাগো (ইউআইএস) এর হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের অধীনে টোব্যাকোনমিকস মূলত অর্থনৈতিক গবেষণা করে থাকে।
গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ২.৩৮ (৫ এর মধ্যে), যা বৈশ্বিক গড় স্কোরের (২.০৭) চেয়ে সামান্য বেশি। তবে সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে যেসব দেশ খুব ভালো স্কোর (৪.৬৩) করেছে তাদের তুলনায় বাংলাদেশের এখনও অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্কোর পাওয়া দুটি দেশ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। দেশদুটিতে সিগারেটের উপর উচ্চহারে সুনির্দিষ্ট একক এক্সাইজ কর চালু থাকায় এবং নিয়মিতভাবে তা বৃদ্ধি করায় সিগারেটের সহজলভ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
টোব্যাকোনমিকস স্কোরকার্ড বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের তথ্য ব্যবহার করে দেশগুলির সিগারেট কর নীতিমালা মূল্যায়ন করেছে। প্রায় অর্ধেক দেশ দুইয়ের নিচে স্কোর পেয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে খুব সামান্যেই, বৈশ্বিক গড় স্কোর ১.৮৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.০৭।
টোব্যাকোনমিকস এর পরিচালক এবং এই স্কোরকার্ডের প্রধান লেখক ফ্রাঙ্ক জে. চালুপকা বলেন, “এই স্কোরকার্ডের মাধ্যমে এটি পরিস্কার যে, সিগারেটের কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে যা কোভিড-১৯ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যবহার করা সম্ভব এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এরফলে অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং যা একটি সুস্থ ও উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী গঠনে অবদান রাখবে।”
সিগারেট করনীতির স্কোর এ ২০১৪ সালের (০.৮৭৫) তুলনায় ২০১৮ সালে (২.৩৮) বাংলাদেশের কিছুটা অগ্রগতি হলেও সিগারেটের দাম ও করকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। উভয় ক্ষেত্রেই মাত্র ১ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। বহুস্তরবিশিষ্ট অ্যাডভেলোরেম করকাঠামো এবং ভিত্তিমূল্য খুব কম থাকাই এর অন্যতম প্রধান কারণ।
জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “সিগারেটের বিদ্যমান জটিল মূল্যস্তর প্রথা বাংলাদেশের স্কোর কম পাওয়ার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে বহুস্তর বিশিষ্ট মূল্যস্তর প্রথা বিলুপ্ত, সুনির্দিষ্ট করপদ্ধতি প্রবর্তন এবং সর্বোপরি জীবন বাঁচাতে, ক্যানসারসহ তামাকজনিত রোগের প্রকোপ কমাতে ও প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণের জন্য সমস্ত তামাকজাত পণ্যের উপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক উল্লেখযোগ্যহারে বাড়াতে হবে।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে তামাকাসক্ত ফুসফুস করোনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজ বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাকের ক্ষতির শিকার এই বিপুল প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী বর্তমানে মারাত্মকভাবে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সস্তা তামাকপণ্যই এর প্রধান কারণ। তামাকজাত পণ্যের কর বৃদ্ধি করা হলে এর ব্যবহার কমে এবং সরকারের বাড়তি রাজস্ব আয় অর্জন সম্ভব হয়। অতিরিক্ত এই অর্থ সরকার করোনা মহামারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যয় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারবে।”
বাংলাদেশে বছরে ১ লক্ষ ২৬ হাজার মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে অকাল মৃত্যুবরণ করে এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা উক্ত বছরের জিডিপির ১.৪ শতাংশ। উপরন্তু, কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সুনিশ্চিতভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহের মাধ্যমে এই অার্থিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের জন্য একটি দ্রুত এবং সহজ উপায় হবে তামাক কর সংস্কার করা। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্য ক্ষতি হ্রাস করার একমাত্র কার্যকর উপায় তামাক কর এবং এক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ একক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ কর আরোপ এবং মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে নিয়মিত কর বৃদ্ধি করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত