পাকিস্তানে প্রতিঘণ্টায় একজন নারী ধর্ষিতা হন। আর ধর্ষণের পর হত্যাও নিয়মিত ঘটনা। সম্প্রতি ৭ বছরের এক কন্যাশিশু ও এক তরুণী গণধর্ষণের পর উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তান। নারী অধিকারকর্মীসহ আন্দোলনে মাঠে নামেন দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো
এরপরই পাকিস্তানে যৌন নিগ্রহ রুখতে বিচার ব্যবস্থাকে কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমরানের সরকার। আইন সংশোধন করে রাসায়নিক প্রয়োগে ধর্ষকদের পুরুষাঙ্গ (‘কেমিক্যাল কাস্ট্রেশন’) অকেজো করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুমোদন মিলেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবর, ধর্ষণের মামলাগুলিকে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে অপরাধীদের শাস্তি পেতে অযথা দেরি না হয়।
শাসকদল তেহরিক-ই-ইনসাফের সিনেটর ফয়জল জাভেদ খান তাঁর টুইটে জানিয়েছেন, ধর্ষণ দমনে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই পেশ করা হবে পাকিস্তান পার্লামেন্টে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়া হয় আইনমন্ত্রনালয়ের তরফে। ধর্ষণ দমনে একটি অর্ডিন্যান্স জারির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে জানিয়ে তার একটি খসড়াও পেশ করা হয় বৈঠকে।
ওই খসড়ায় পাকিস্তানে মহিলাদের নিরাপত্তায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম পুলিশে আরও বেশি সংখ্যায় মহিলা কর্মী নিয়োগ, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে ধর্ষণের মামলাগুলির বিচার এবং ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
জিও টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্ত্রীসভার বৈঠকে বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে যেন কোনও বিলম্ব না হয়। নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ইমরান খান জানিয়েছেন, নতুন আইনে কোনও অস্বচ্ছ্বতা থাকবে না। আইন কঠোর হবে। বিচার প্রক্রিয়াও হবে দ্রুততর। ধর্ষিতারা যাতে নির্ভয়ে ঘটনার অভিযোগ জানাতে পারেন পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে সে দিকেও নজর রাখা হবে। ধর্ষিতাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। ধর্ষিতাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবর, বৈঠকে কোনো কোনো মন্ত্রী ধর্ষকদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়ারও দাবি জানান। তার পরিপ্রেক্ষিতে পাক প্রধানমন্ত্রী ইসরান খান বলেছেন, ‘‘রাসায়নিক প্রয়োগে ধর্ষকদের পুরুষাঙ্গ অকেজো করে দেওয়ার মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ শুরু হোক। তার পর ধাপে ধাপে এগোনো যাবে।’
পাকিস্তানের আইন মন্ত্রনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এখন পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে না বলে সরকার ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রবর্তন করতে অধ্যাদেশ জারি করবে।
তিনি জানান, ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ থেকে ১৫ বছর কারাদণ্ড ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে খোজাকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ধর্ষণকারীকে সাময়িক বা আজীবনের জন্য খোঁজাকরণ করা হতে পারে। কারও বিরুদ্ধে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি পাওয়া গেলে রাসায়নিক খোজাকরণের আশঙ্কা বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এ আইন রয়েছে।