ঢাকা   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৭:৪৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে: বিক্রম দোরাইস্বামী

পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক নিবিড় হলেও তারও পরিচর্যা দরকার বলে মনে করেন ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। আর বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেই কাজটিই করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র উপস্থাপনের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে ইন্ডিয়া হাউজে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে আসেন বিক্রম দোরাইস্বামী।
বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরে নতুন হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অত্যন্ত বিশেষ অংশীদার ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
“আমাদের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কারণ এই বন্ধুত্ব রচিত হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি এবং আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। আমি একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই যে, বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয় এবং এটি কখনোই হ্রাস পাবে না।”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় রয়েছে বলে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
নিবিড় সেই সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে দোরাইস্বামী বলেন, “নিকটতম সম্পর্কেরও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আমার সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়েছে।
“আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই অংশীদারিত্বকে সর্বস্তরে প্রচার করতে কোনো সুযোগই ছাড়ব না। আমরা উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানাব। এই নির্দেশ আমাদের সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশের সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
মতবিনিময় সভায় সীমান্ত হত্যা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে দোরাইস্বামী বলেন, “এটাকে (সীমান্ত হত্যা) পুরোপুরি বন্ধ করা আমাদের লক্ষ্য। যেভাবে আমাদের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক সম্প্রতি বলেছেন সর্বোচ্চ রকম সহনশীলতা দেখানো এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় মারণঘাতি নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

“মূলত এটা একটি আইনশৃঙ্খলা সমস্যা এবং আইনশৃঙ্খলার বিষয় হিসাবে এটাকে দেখতে হবে। এটা নিয়ে আপনাদের মনোভাব কী আমি বুঝতে পারি।”
ভারত ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করে হাই কমিশনার দোরাইস্বামী বলেন, “এটার কোনো সহজ সমাধান নেই, তবে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সমাধান আমাদের একসঙ্গে খুঁজতে হবে। আমি আপনাদের এখন এ বিষয়ে এ বেশি কিছু বলতে পারছি না, তবে সর্বোচ্চ রকম প্রচেষ্টা নেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কানেকটিভিটি জোরদার করতে যৌথ প্রকল্পগুলোর সম্পন্ন হওয়া দেখতে চাই আমি, যাতে কানেকটিভিটির অংশদারিত্বে আমাদেরকে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে তার ফিরতি পাওনা যাতে বাংলাদেশের মানুষ পেতে পারে।”
করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারে থাকবে জানিয়ে দোরাইস্বামী বলেন, “আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানির উৎপাদক হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ভ্যাকসিন নিয়েও কাজ করছি আমরা।
”আমরা যত দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব ভ্যাকসিন পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশদারিত্বে যাব। শিগগির ভারতীয় ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে যাবে, তখন বাংলাদেশ সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবে এখানেও পরীক্ষায় যাব।”
যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে যেতে হলে এক্ষেত্রে ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে কেবল বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমাদের অংশীদারিত্বের উৎস পারস্পরিক শ্রদ্ধা। ঐতিহাসিক জনযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে একটি জাতিকে রূপদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের চেতনার প্রতি আমরা গভীরভাবে প্রশংসা ও সম্মান জানাই। আপনারা অসংখ্য মৃত্যু ও মা-বোনেদের প্রতি বর্বর নির্যাতন উপেক্ষা করে অনন্য সাহস এবং বীরত্বের সাথে নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচার ও কঠোরতার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতির জন্য বাংলাদেশ আজ সমানভাবে সম্মানিত। একইভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম গতিতে আপনাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে আমরা আপনাদের বিশ্বখ্যাত আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তার চেতনার প্রশংসা করি।
রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশঃ


এর আগে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। রাষ্ট্রপতি ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন ভারত শুধুমাত্র বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী নয়, বিশ্বস্ত বন্ধুও। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্ক কূটনৈতিক পরিমন্ডল ছাড়িয়ে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, নবনিযুক্ত হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাবনাময় প্রতিটি ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবেন।
এ সময় ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বলেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।তিনি জানান, ভারতে যে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদিত হবে সেটা বাংলাদেশ সময়মত পাবে। ভারতের নতুন হাইকমিশনার দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রপতির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত