কক্সবাজার সৈকতের ৫২ স্থাপনা উচ্ছেদের বাধা কাটল, হাইকোর্টের আদেশ আপিল বিভাগে বাতিল
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২ ব্যক্তির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বাতিল করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
ফলে সমুদ্র সৈকতের ওই পয়েন্ট থেকে ৫২ ব্যক্তির অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
হাই কোর্টের আদেশ বাতিল চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
আদালতের আদেশের পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, তারা এখন স্থাপনা উচ্ছেদে দ্রুতই উদ্যোগ নেবেন।
হাই কোর্টে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর ৫২ ব্যক্তির রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে লাইসেন্স নিয়ে ৫২ ব্যক্তি সৈকতে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা শুরু করে।
স্থাপনা তৈরির দুই মাস পর, অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ স্থাপনা সরাতে নোটিস দেয়।
ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ৫২ ব্যক্তি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে আদালত ১৬ এপ্রিল রুলসহ স্থগিতাদেশ দেয়।
এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানি করেই হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ ও রুল সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করে দিল।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য অনেক আগেই আদালতের নির্দেশনা পেয়েছিলাম। ২০১১ সালে সমুদ্র সৈকত থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়ে গিয়েছিল।
“পরবর্তীতে প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা বিবেচনায় আপিল বিভাগ কিন্তু আরও কঠিন রায় দিয়েছে। সে রায়ে বড় বড় অবৈধ স্থাপনাগুলোও ভেঙে ফেলতে বলেছেন আদালত।”
তারপরও কিছু ‘স্বার্থান্বেসী লোক’ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করে পৌরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যখন উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়, তখন তারা গোপনে হাই কোর্টে এসে নোটিসের স্থগিতাদেশও নিয়ে নেয়।
“বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে আসার পর আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। শুনানির পর আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বাতিল করে দিয়েছে।”
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মনজিল মোরসেদ বলেন, “আমার প্রশ্ন থাকবে প্রশাসন কেন সেখানে চোখ বুজে থাকে? প্রশাসন তো জানে এ নিয়ে আদালতের নির্দেশ আছে, রায় আছে। আর পৌরসভাই বা কেন তাদের লাইসেন্স দেবে!”
পৌরসভার যিনি বা যারা ওই ৫২ ব্যক্তিকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ‘আইনগত ব্যবস্থা’ নেবেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী।
এ নিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সৈকত এলাকায় এসব বৈধ-অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়ে আসছে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে।
“উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও জায়গাটার মালিক জেলা প্রশাসন। এটা খাস জায়গা। খাস জায়গার দায়িত্ব কালেক্টরের। আর কালেক্টরেট হলেন ডিসি, ল্যান্ড মিনিস্ট্রি।”
তাই এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পর প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।
“আমরা যদি যৌথভাবে এটা না করি, আমি সরাই দিলাম; অপসারণ করলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসন যদি এটা ধরে রাখতে না পারেন, অন্য একটা কিছু করার মতো ব্যবস্থা না করেন; তাহলে এ সমস্যাগুলো হবেই।”
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, সৈকতের ৫২টি স্থাপনা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দায়ের রুল জারি ও স্থগিতাদেশ খারিজ করার আদেশের খবর আইনজীবীর মাধ্যমে জেনেছেন।
“আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর তা কার্যকর করার জন্য দ্রুত উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।”