বিচারপতি ওবায়দুল হাসান:
১৮ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে ‘সুপ্রীমকোর্ট দিবস’। বরাবরের মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এ অনুুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে অনুষ্ঠানটি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশে ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম প্রতিবছর একটি ম্যাগাজিন বের করেন সংগঠনের পক্ষ থেকে। একবার তাদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘বন্ধন’Ñএ আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল, লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট দিবস’।
দিবসটি পালনের পেছনের কিছু কথা সবার সামনে বলার জন্যই আমার এ লেখা। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই ১৯৮৮ সালের ১৮ আক্টোবর। তখন থেকেই জানতে ইচ্ছে হতো- বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট কবে এবং কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়? এই সর্বোচ্চ বিচার প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা যায় কিনা? সময়ের বিবর্তনে এক সময় আমি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করি। শুরু হয় বিচারক জীবনের যাত্রা। তখন ভাবনাটি আমার মনে আরও প্রোথিত হয়। মনে জাগা প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে আমাদের সংবিধান ও ইতিহাস জানার চেষ্টা করি। যা জেনেছি তার আলোকেই আজ আমার এই কথাগুলো বলা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি এ বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসন সাহেবকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি এ নিয়ে চিন্তা করবেন বলেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এ বিষয়টি আর এগোয়নি। পরবর্তীতে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) যখন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন আমি তাকেও বলেছিলাম বিষয়টি নিয়ে ভাবতে। কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন তিনি আমাকে ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে ডেকে পাঠান। প্রধান বিচারপতির খাস কামরার বিপরীতে জজ সাহেবদের বসার জন্য যে ছোট্র লাউঞ্জটি আছে, সেখানে আমি ও এম ইনায়েতুর রহিম পৌঁছে দেখি আপীল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি যথাক্রমে সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ অপেক্ষমাণ। আমরা দুজন লাউঞ্জে পৌঁছার পর সকলে একত্রে প্রধান বিচারপতির কক্ষে প্রবেশ করি। প্রধান বিচারপতি আমাদের দুজনের উদ্দেশে বললেন ‘এখন থেকে প্রতিবছর সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে সংবিধান দিবস পালন করার জন্য আমি একটি কমিটি গঠন করেছি। সেটিতে আপনাদের দুজনকে নতুন করে (আমাকে ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে) অন্তর্ভুক্ত করে নিলাম। কারণ আপনাদের উভয়েরই বাবা দেশের সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।’ যা হোক, যথারীতি আমরা কাজ শুরু করলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে আমরা পাঁচজন একমত হলাম যে, সংবিধান দিবস পালন করাটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হলে সেটি হবে যথাযথ পদক্ষেপ।
ভারতের সংবিধান দিবস ২৬ নবেম্বর। ১৯৪৯ সালের এ দিনে ভারতীয় গণপরিষদ কর্তৃক তাদের সংবিধান গৃহীত হয়। প্রতিবছর ২৬ নবেম্বর ভারত তাদের সংবিধান দিবস পালন করে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সুপ্রীমকোর্ট অব ইন্ডিয়ার উদ্যোগে। আমরা কমিটির সদস্যরা অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেই যে, সংবিধান দিবস পালন যেহেতু সরকারী সিদ্ধান্তের বিষয়, এ ব্যাপারে আমাদের উদ্যোগ নেয়াটা সমচীন হবে না। তবে আমরা সুপ্রীমকোর্টের পথ চলার শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এখন থেকে সুপ্রীমকোর্ট দিবস নামে প্রতিবছর একটি দিন পালন করতে পারি। আমরা, কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে জানালে তিনি আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং এ ব্যাপারে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ফুল কোর্টে পেশ করার সিদ্ধান্ত দেন।
আমাদের এ অঞ্চল তথা ভারতবর্ষে উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠার ইতিহাস খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, ১৮৬১ সালের হাইকোর্ট আইনের বিধান মতে ১৮৬২ সালে সুপ্রিমকোর্ট, সদর দেওয়ানি ও সদর নিজামত আদালতসমূহ বিলুপ্ত করে তদস্থলে ব্রিটিশ সরকার কলকাতায় হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। এখানে উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে সদর দেওয়ানি আদালত, ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রীমকোর্ট এবং ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে সদর নিজামত আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৬২ সালে কলকাতা হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ তদানিস্তন পূর্ববঙ্গ কলকাতা হাইকোর্টের অধীভুক্ত এলাকা ছিল। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মলগ্নে দেশটির পূর্বাংশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য হাইকোর্ট (বেঙ্গল) অর্ডারের বলে ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোনণাপত্র জারি করে ২৬ মার্চ। অর্থাৎ, স্বাধীনতা ঘোষণার দিন থেকে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করা হয় এবং একই তারিখে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক Laws Continuance Enforcement Order জারি করে বিধান করা হয় যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে প্রচলিত সব আইন উক্ত ঘোষণাপত্রের বিধান ও প্রয়োজনীয় সংশোধনসাপেক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশে চালু থাকবে এবং বিচারবিভাগসহ সব সামরিক ও বেসামরিক সরকারী কর্মচারী বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্যের শপথ নিলে তারা তাদের স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন।
১৬ ডিসে¤¦র ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরদিন অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি, তিনি বাংলাদেশ সাময়িক সংবিধান আদেশ Provisional Constitution of Bangladesh Order জারি করেন। এই আদেশ বলে একজন প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিবৃন্দের সমন্বয়ে বাংলাদেশ হাইকোর্ট গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ৯১নং আদেশ বলে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্য দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে নিয়ে আপীল বিভাগ গঠন করা হয়। এই আপীল বিভাগে পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্টে বিচারাধীন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মামলাগুলো স্থানান্তর করা হয়। অতঃপর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৪ নবেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ বহুল আকাক্সিক্ষত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করে। সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখ থেকে এই সংবিধান প্রবর্তিত হয়। সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের প্রথম পরিচ্ছেদে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে আমাদের সুপীমকোর্ট গঠিত হয়।
উল্লিখিত, ধারাবাহিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, আমাদের এ অঞ্চলে একটি উচ্চতর আদালত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১৮৬২, ১৯৪৭ এবং ১৯৭১-১৯৭২ এর সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে সর্বপ্রথম বাংলায় একটি উচ্চতর আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের পর আমরা তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে একটি প্রাদেশিক হাইকোর্ট প্রাপ্ত হই। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো ১৯৭১-৭২ খ্রিস্টাব্দ, যখন বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার লাভ করে, তথা স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭২ এর ১১ জানুয়ারি Provisional Constitution of Bangladesh Order- মাধ্যমে সর্বপ্রথম এই সর্বোচ্চ আদালতটি প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট হিসেবে। পরবর্তীতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান বলবৎ হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট’ তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করে।
আমাদের কমিটিতে যখন বিষয়টি আলোচিত হয়, আমি প্রস্তাব করেছিলামÑ ১১ জানুয়ারিকে সুপ্রীমকোর্ট দিবস হিসেবে পালন করার জন্য। আমার যুক্তি ছিল, যেহেতু Provisional Constitution of Bangladesh Order এর মাধ্যমে ১১ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলায় প্রথম উচ্চতর আদালত যাত্রা শুরু করে, সে দিনটিই হওয়া উচিত আমাদের সুপ্রীমকোর্ট দিবস। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ যুক্তি দেন যে, Provisional Constitution of Bangladesh Order অনুযায়ী ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি ‘হাইকোর্ট’ স্থাপিত হয়েছিল; কিন্তু সুপ্রীমকোর্ট স্থাপিত হয় সংবিধান আসার পর। তাই ১৬ ডিসেম্বর অথবা কাছাকাছি অন্য কোন দিনে এ দিবসটি পালন করা উচিত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও সৈয়দ রিফাত আহমেদ উভয়েই বিচারপতি আরিফের যুক্তি সমর্থন করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে আমার কাছেও মনে হয়েছে ১১ জানুয়ারি দিবসটির প্রতি আমাদের আবেগ থাকলেও বাস্তবে সুপ্রীমকোর্ট কাজ শুরু করেছে ১৬ ডিসেম্বরের পরের কোন দিন থেকে।
তারপর শুরু হলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ এর পর কোন্ দিন সুপ্রীমকোর্ট তার যাত্রা শুরু করে, তার খোঁজ করা। সুপ্রীমকোর্টের ইংলিশ সেকশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শাখার কাগজপত্রাদি থেকে দেখা যায় যে, ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুপ্রীমকোর্টের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সেদিন থেকে সুপ্রীমকোর্ট তার যাত্রা শুরু করে। উল্লেখ্য যে, প্রথা অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্ট সাধারণত ১৫ ডিসেম্বরের পর শীতকালীন ছুটিতে থাকে এবং তখনও তাই ছিল। সংবিধান এর ৬ষ্ঠ ভাগের প্রথম পরিচ্ছদ অনুযায়ী গঠিত সুপ্রীমকোর্টের যাত্রা শুরুর বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির বিশেষ নির্দেশে ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রীমকোর্ট খুলে দেয়া হয় এবং এর উভয় বিভাগ কার্যক্রম শুরু করে। তাই আমরা ১৮ ডিসেম্বরকে সুপ্রীমকোর্ট দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিই। পরবর্তীতে বিষয়টি সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট-এ উপস্থাপন হলে গত ২৫/১০/২০১৭ তারিখে এটি অনুমোদনের জন্য আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় যে, সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ও নেতৃত্বে বীরত্বপূর্ণ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশের মুক্তিকামী জনতা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। বিজয় অর্জনের এক বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করেন, যা ১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত এবং একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। উক্তরূপ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সভায় বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট দিবস উদযাপন সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রণীত সংবিধানের অধীন বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের যাত্রাকালীন সময়কে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে এবং ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রীমকোর্টের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বছরের একটি দিনকে সুপ্রীমকোর্ট দিবস ঘোষণা করা এবং তা পালন করার বিষয়ে উপস্থিত সভাসদগণ একমত পোষণ করেন। আলোচনান্তে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী যেহেতু ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট প্রথম কার্যক্রম শুরু করেছিল, সেহেতু প্রতিবছর সেই দিনটিকে অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ‘সুপ্রীমকোর্ট দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ইতোপূর্বে ঘোষিত অবকাশকালীন ছুটির মধ্যে পড়ায় সে বছরের (২০১৭ সালের) ‘সুপ্রীমকোর্ট দিবস’ এর অনুষ্ঠানাদি উক্ত অবকাশকালীন ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবস অর্থাৎ ২ জানুয়ারি ২০১৮ খ্রি. তারিখে উদ্যাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট এ দেশের মানুষের মৌলিক ও আইনগত অধিকার সুরক্ষায় সদা সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বেআইনীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে যেমন এই সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে, ঠিক একইভাবে অযাচিতভাবে সংবিধান সংশোধন করাকেও বেআইনী ঘোষণা করে দেশে সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রীমকোর্ট এক অনন্য সাহসী ও প্রজ্ঞাময় ভূমিকা পালন করেছে।
সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ড, জাতীয় চার নেতা হত্যা তথা জেল হত্যাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রদানের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে এই সুপ্রীমকোর্ট। এই সুপ্রীমকোর্টের প্রজ্ঞাবান বিচারপতিগণ আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের মাটিতে সংগঠিত অবর্ণনীয় বর্বর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় সম্পৃক্ত অনেকের বিচার চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করেছেন এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের এই নিবিষ্ট ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
লেখক : বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট
সৌজন্যে: দৈনিক জনকন্ঠ