ঢাকা   বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১   বিকাল ৫:১৩ 

সর্বশেষ সংবাদ

যা বললেন জয়শঙ্কর

বাংলাদেশ-ভারত ‘কালোত্তীর্ণ’ সম্পর্কের গভীরতা বা ব্যাপ্তির বিষয়টি তুলে ধরলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। সোমবার বাংলাদেশকে ভারতের ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ ইঞ্জিন প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে রচিত ভারত ও বাংলাদেশের  মধ্যকার কালোত্তীর্ণ সম্পর্কের গভীরতার কথা তুলে ধরেন। ভারতীয় হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চুয়াল ওই হস্তান্তর অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
।।যা বললেন ড. এস জয়শঙ্কর।।
আমি বাংলাদেশের কাছে ১০ টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত। এর মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত অক্টোবরের ভারত সফরের সময় আমাদের পক্ষ থেকে দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সক্ষম হলাম।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ‘সোনালী অধ্যায়’ রচনা চলমান রয়েছে।
বিশ্বের খুব কম দেশের মধ্যেই আমাদের মতো ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের
অংশীদারিত্ব আজ এই অঞ্চলে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের ক্রমবর্ধমান বহুমুখী সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে পর্যটন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুরক্ষা, শক্তি, সংস্কৃতি এবং পরমাণু বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, মহাকাশ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং মানুষে মানুষে শক্তিশালী সম্পর্ক।
আপনাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রতিবেশী হিসেবে, আমরা আপনাদের প্রবৃদ্ধিতে আনন্দিত।

বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং সকল আর্থ-সামাজিক সূচকে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

মুজিববর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে
গিয়ে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্লের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে জনগণের আত্মনিয়োগ ও বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব বিশ্বকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, বিশেষ করে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথেও নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

ভারত এই জটিল সময় মোকাবেলায় বাংলাদেশের জনগণকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মহামারীর কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করার লক্ষ্যে আমাদের উদ্ভাবনী সমাধান বের করতে হয়েছে। আমাদের সময়োপযোগী প্রচেষ্টার ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় উৎপাদন শিল্পের জন্য পণ্য ও কাঁচামাল পরিবহনের জন্য মালবাহী ট্রেন ব্যবহার শুরু করেছে। রেলপথে পণ্য পরিবহনের ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ অব্যাহত থাকা আরও বেশি নিশ্চিত হয়, বিশেষত পবিত্র রমজান মাসে, কারণ স্থল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য এসময় নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়। আমি এটি লক্ষ্য করেও সমানভাবে আনন্দিত ষে, চলমান কোভিড মহামারী আমাদের সামগ্রিক সহযোগিতার গতি স্থিমিত করতে পারেনি। ২০২০ সালের মে মাসে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রোটোকলটিতে দ্বিতীয় সংযোজন স্বাক্ষরের ফলে প্রোটোকল রুটের সংখ্যা ৮ থেকে ১০ এ উন্নীত হয়েছে এবং দুটি সম্প্রসারিত বন্দরসহ ব্যবহারযোগ্য বন্দরের সংখ্যা ৬ থেকে ১১-এ উন্নীত হয়েছে।

চট্টগ্রাম হয়ে কলকাতা থেকে আগরতলা পর্যন্ত কনটেইনার কার্গো পরীক্ষামূলক
পরিচালনার সফল সমান্তি প্রকৃতপক্ষে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন, কারণ এটি কেবল আমাদের ঐতিহ্যবাহী নৌপথ সংযোগকেই পুনরায় প্রাণবন্ত করে তোলেনি বরং পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধাও বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।সম্প্রতি পণ্য ও কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে জানতে পেরেও আমি আনন্দিত।
রেল, অভ্যন্তরীণ বা উপকূলীয় নৌপথ ইত্যাদি সাশ্রয়ী, সময় এবং পরিবেশবান্ধব সংযোগ ব্যবস্থাগুলি আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং ব্যবসায়ের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে -যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩% বেশি এবং একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি; আমি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও বাড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
ভারত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উন্নয়নের অংশীদার। ভারত বিশ্বের যেকোনো দেশের প্রতি যে ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে বাংলাদেশকে প্রদত্ত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি অনন্য হৃাসকৃত ঋণ সুবিধা। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের
অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করবে, যা পরবর্তীস্তরের অর্থনৈতিক উল্লম্ফনের জন্য অত্যাবশ্যক। চলমান এই প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের একসাথে কাজ করা দরকার।
সমৃদ্ধি ও বিকাশের বন্ধু হিসাবে, আমরা একত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতারও মুখোমুখি হয়েছি।
আমি তাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের অংশীদারিত্ব একটি সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে। এই ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে এটি হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
আজ এই অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত প্রত্যেককে আমি অভিনন্দন জানাই এবং আমরা,
বিশেষত এই ঐতিহাসিক বছরে এই ধরণের আরও মাইলফলক অতিক্রম করতে চাই, যেমন আগামী বছর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর উদযাপন করতে চলেছি। এই অংশীদারিত্ব প্রকৃতপক্ষেই অনুকরণীয় হয়ে উঠুক এবং আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও জোরদার করুক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত