নাহিদ সুলতানা যুথি। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার এই আইনজীবী সু্প্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের সংগঠন রুলার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি হাইকোর্টে আগাম জামিন বিতর্ক নিয়ে ফেসবুকে তার একটি লেখা বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। পাঠকদের জন্য আমরা লেখাটি প্রকাশ করলাম।
।।প্রহসনের আগাম জামিন।।
বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়েছে কিছুটা তরিঘড়ি করে পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতেও স্বল্প পরিসরে ভার্চুয়াল কোর্টের চালুর বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় ১০ বছর আগে থেকে । আমাদের বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কেবল মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হল । বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে তারই সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন আজ বাস্তব।
এর সুফল ভোগ করছে সারাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের প্রত্যেকের হাতে এখন স্মার্টফোন, ফোর-জি গতির ইন্টারনেট সেবা থেকে শুরু করে তথ্য প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য । আমাদের দেশের ইন্টারনেটসহ স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে সফল ভাবে। এ দেশীয় টেলিভিশনগুলো এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সারাদেশই ডিজিটাল হওয়ায় সবাই সুবিধাও পাচ্ছেন।
কিন্তু আমাদের পরিকল্পনায় ভার্চুয়াল কোর্টের চিন্তা স্থান হয়নি, ভাল অর্থে বললে বলা যায় আমরা বাঙ্গালিরা বরাবরই আয়েশি , প্রথমত পরিকল্পনা করে করে আমরা কোন কাজ করিনা পাশাপাশি গায়ের উপর না আসলে সেটাতে আমরা নির্লিপ্ত থাকি।
মার্চের ৮ তারিখে করোনা ভাইরাসের প্রথম রুগী শনাক্ত হওয়ার পরে সম্ভবত ১৯ তারিখে আমরা অবকাশ কালীন কোর্ট করেছিলাম যেদিন অর্থাৎ সংক্রমণ শনাক্তের ১০ম দিনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম ব্যক্তি মারা যান। একজন মারা যাওয়ার পর হয়ত আমাদের চেতনা বোধ জাগ্রত হল এবং তখন থেকে একটু একটু করে আমরা সচেতন হতে আরম্ভ করেছিলাম । করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মার্চ মাসের শেষ থেকেই বাংলাদেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালত পুরোপুরি বন্ধ থাকে এবং পরবর্তিতে সম্ভবত ২০ এপ্রিল ভার্চুয়াল কোর্ট শুরু হল । যে ভার্চুয়াল কোর্টের জন্য ভারতে লেগেছিল কমবেশি ১০ বছর সেখানে আমাদের দেশে হঠাৎই শুরু হলো ভার্চুয়াল কোর্ট …এবং ট্রায়াল এন্ড এরর করে করে এগিয়ে চলছে ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট ।
অনেক চড়াই উৎরাই করে মোটামুটি আমরা করোনা মোকাবেলা করে করে এগিয়ে যাচ্ছি ।আমাদের বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনায় আক্রান্তসহ মৃত্যুর হার তুলনামূলক ভাবে বেশ কম এবং আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতি নাই বললেই চলে সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমা সাধ্যের মধ্যেই আছে । এবং বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিঙ্গের মাধ্যমে তার দুর্যোগকালীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সংসদ অধিবেশন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলছে।
এতো কথার সূত্রপাত এই জন্য যে, সম্প্রতি একটি আগাম জামিন নিয়ে জনমনে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে কিন্তু মহামান্য আদালত তার সুন্দর সমাপ্তি করেছেন। কিন্তু আইনজীবীরা আমরা কি বুঝি না ? আমরা কি নিয়ে কোর্ট এ যাচ্ছি ? আমাদের বড়দের দেখেই না ছোটরা শিখবে যাকে আমরা কোর্ট এর নর্ম বলে থাকি এবং আমরা গর্ব বোধ করি।
আইনজীবী বিদেশে , আসামিরা বিদেশে ,কোর্ট হচ্ছে ভার্চুয়াল কিভাবে আমরা আগাম জামিন নিয়ে আদালতে আসতে পারলাম ,কিভাবে মামলাটিকে ম্যানশন করে লিস্ট এ টপে নিয়ে আসলাম ? কিভাবে পারসোনাল উপস্থিতি না মেনে আগাম জামিন নিয়ে আসা যায় ? যেখান আগাম জামিন উচ্চ আদালতে হচ্ছে না পারসোনাল উপস্থিতির সমস্যার জন্য, সেখানে বিদেশ থেকে বিদেশি ভার্চুয়াল উকিল ভার্চুয়াল আসামি ,দেশি ভার্চুয়াল বড় বড় নামি দামী উকিল সাহেবরা মামলাটি নিয়ে কোর্টে গেলেন আবার অর্ডার এ তাদের নাম যেন না আসে সেটি ও করলেন । আমাদের প্রশ্ন এমনটি কি করা যায় ? আইন আছে ,আদালত আছে , আমাদের নাম পদ পদবি আছে সাথে কিন্তু কিছু দায়বদ্ধতাও আছে সেটি ও কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে । আপনারা কি কয়দিন পরে তারেকের মামলা কজ লিস্টে এনে জামিন চাইবেন অথবা বিচার চাইতে ভার্চুয়াল কোর্ট এ আসবেন ? প্রশ্ন কখনই অবান্তর না …উত্তর ও কিন্তু আপনারা জানেন। তাই দায়বদ্ধতাও নৈতিকতার স্খলন নয় …। আমরা সবাই জানি আমাদের আইন আমাদের দেশের অধিক্ষেত্রের মধ্যে। ভার্চুয়াল কোর্ট আন্তর্জাতিক আদালত নয় যে আপনারা বিদেশে বসে বিদেশি উকিল বিদেশি আসামি সাথে দেশি উকিল প্রতিনিধি নিয়ে আইন আদালতের সাথে প্রহসন করেছেন।আইন আপনারা কেউ ই কম জানেন না …অট্টহাসি কখন ও কখনও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা আমরা কম বেশি সবাই জানি ………… ।
লেখকঃ নাহিদ সুলতানা যুথি, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, সাবেক কোষাধ্যক্ষ, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।